বড় ভাই সন্ধ্যা থেকে মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগী রিসিভ করতেছেন!! রাত ১০ টার দিকে স্যারের সাথে রোগী ফলোআপ দিলেন। এরপর আরো ৭-৮ জন রোগী রিসিভ করলেন।।
আমি ভাইয়ার কাছে একটা টপিক্স বুঝে নিবো ভেবে বই নিয়ে গিয়েছিলাম!!! ১ টার দিকে হাই তুলতে তুলতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম!!!
২ টার পর রোগী আসা বন্ধ হলে, ওয়ার্ডের সব রোগী কয়েবার করে দেখে রাত ৩ টার দিকে ভাইয়া, সন্তষ্ট চিত্তে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লেন। আলহামদুল্লিহ্! সবাই ভালো আছে, একটু জিরিয়ে নেয়া যাক্ এবার!!!!
চোখদুটো কেবল লেগে এসেছে! হঠাৎ চারিদিকে হৈহুল্লোড় পড়ে গেছে!! দরজায় খট্ খট্ শব্দে ভাইয়া লাফ দিয়ে উঠলেন!!
প্রচন্ড ভয়ে আমার বুক ধড়ফর করে উঠলো!! ঘুম থেকে উঠে চোখ ডলছিলাম!!!
ধনীর দুলালী রাত তিটার সময় বয়ফ্রেন্ডের সাথে ফোনে কথা কাটাকাটি করে তির-চারটা সিডাটিভ খেয়ে ফেলেছেন। বাসায় তোলপাড়!! সাথে সাথে হসপিটাল নিয়ে আসছে! সাথে এ্যাটেন্ডেন্ট ১৫-২০ জন!
মেডিসিন ওয়ার্ড মাথায় তুলেছে!!!
ভাইয়া, খুব দ্রুত বেসিনে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিলেন! সামনের আয়নাটায় চোখ দুটো দেখলেন! লাল হয়ে গেছে! গত ৮ ঘন্টা ধরে টানা ডিউটি করছেন!
সকাল ১০ টায় ডিউটি শেষ! এখনও প্রায় ৭ ঘন্টা বাকী! এক নাগারে ১৫ ঘন্টা ডিউটি!
ইন্টার্ণ অবস্থায় এটা প্রায় কমন একটা ব্যাপার!! দুচোখ বেয়ে নিজের অজান্তেই দুফোটা পানি টপ্ টপ্ করে বেসিনে কলের পানির সাথে মিশে গেলো!! কেউ দেখলো না, সেই দুফোটা পানি তে কি পরিমাণ দুঃখ ছিলো!!!
স্টেথোস্কোপ আর স্ফিগমোম্যনোমিটার গলায় ঝুলিয়ে বের হলেন!!!! রোগীকে জিজ্ঞেস করলেন :- “””কি হয়েছে আপনার???”””
ধনীর দুলালী, হাত দিয়ে মাথার চুল ঠিক করতে করতে বললেন “”ভাইয়া, আমার কেমন যেনো ডিজি ডিজি ফিল হচ্ছে!”””কন্ঠে তার ন্যাকামির প্রকাশ!!!
আমার কান-মাথা গরম হয়ে গেলো!!! অন্যদিকে ভাইয়ার অমায়িক হাসি!!!
রোগী সম্পুর্ণ স্বাভাবিক! তিন-চার টা সিডাটিভ এ কেউ মরে না!!!
কিন্তু এই ডাক্টার নামক রোবট গুলোর একটানা ১২-১৮ ঘন্টা ডিউটি, তাদের স্মরণ করে দেয় বিভীষিকাময় নরক যন্ত্রনার কথা!!! সেটা কেউ বুঝে না………
হয়তো এমন কতোগুলো রাত আমাকেও পার করতে হবে…..
তবে……
ছাত্র অবস্থায় আমি ভাইয়ার এমন একটি বিভীষিকাময়
রাতের চাক্ষুষ স্বাক্ষী হয়ে থাকলাম!!
বেঁচে থাক এই মানুষগুলো মানুষের জন্য……যারা বিলিয়ে দিয়েছে তাদের শখ্, আহ্ল্লাদ, হাসি-খুশি আর সুখ……………..
……..Dr. Rezbaul Hasan Royal
Like
Comment
Send