সাপের কামড়ে করণীয়…..

সাপের কামড়ে করণীয়…..

বর্ষাকাল চলছে।বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাড়ছে সাপের কামড়ের প্রকোপ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(WHO) এর ২০১৮ সালের হিসেব অনু্যায়ী বাংলাদেশে এখনো বছরে প্রায় ৭ লাখ মানুষ সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয় তার মধ্যে প্রায় ৬০০০ মানুষ মৃত্যুবরণ করে।

বন্যাপ্লাবিত অঞ্চলে মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ এই সাপের কামড়।

যার বড় একটা অংশ মৃত্যুবরণ করে অপচিকিৎসা,ওঁঝা বৈদ্যের ঝাড় ফুঁক,সাপ কম বিষধর হওয়া সত্ত্বেও ব্লেড বা অন্যকিছু দিয়ে কেটে বিষ নামানোর ভ্রান্ত ধারণা যেটার পরবর্তী রক্তে ইনফেকশন এর কারণে মানুষ মৃত্যুবরণ করে।

তবে বেশীর ভাগ মানুষ যাদের সাপে কাটে সেখানে বিষধর সাপের সংখ্যা কম।আবার অনেকসময় সাপ কামড় দিলেও তাদের লালা(saliva) যেটাকে আমরা বিষ বলি সেটা মানুষের দেহে প্রবেশ করেনা।

বিষহীন সাপের কামড় কিভাবে বুঝবো….

অনেকগুলো দাঁতের কামড় থাকবে

বিষাক্ত সাপের কামড় চেনার উপায় হলো….

দুটি ফ্যাং চিহ্ন বা ক্ষত পাওয়া যাবে, ক্ষত স্থান থেকে রক্ত পড়বে, কামড়ের আশেপাশে প্রদাহ, জ্বলন, ব্যাথা ও ত্বকের রং পরিবর্তন হবে….

যাই হোক,বিষধর সাপে কামড়ের বিপদজনক লক্ষণ গুলি হলো….

১.ঘাড় সোজা করে রাখতে না পারা(Broken neck sign)

২.চোখের পাতা পড়ে যাওয়া(ptosis)

৩.নাকে নাকে কথা বলা (nasal voice)

৪.মুখের কথা জড়িয়ে আসা (verbal difficulty)

৫.ধীরে ধীরে শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকা (Respiratory distress)

৬। বমি বমি ভাব (Nausea)

৭। চোখে ঝাপসা দেখা, অসাড়তা, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, মুখমন্ডল এবং চোখেররপাতা ঝুলে পড়া।

৮। ক্লান্তি ও পেশী দুর্বলতা, তৃষ্ণা এমন কি এলার্জিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে…

এছাড়াও আরো কিছু লক্ষণ সাপের কামড়ে দেখা যায়….

১.আক্রান্ত স্থান ফুলে ফেঁপে যাওয়া।

২. মুখ দিয়ে, দাতের মাড়ি থেকে কিংবা শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্তপাত

৩.প্রস্রাব না হওয়া কিংবা কমে যাওয়া ইত্যাদি।

আমাদের দেশে কিছু কুসংস্কার কিছু ভ্রান্ত ধারণা বিজ্ঞান বর্জিত ধারণা এখনো প্রবল ভাবে মানুষের বিশ্বাস দখল করে আছে।

ওঁঝা বৈদ্যের চিকিৎসায় বিষ নেমে যায় তেমনি একটা মিথ্যাদৃষ্টি।

অনেক সময় যেটা হয় সাপে কাটার পর তীব্র ভয়ের কারণে vasovagal inhibition হয়।অতিমাত্রায় ভয় পাওয়ার কারণে ব্রেইন এ রক্ত সরবরাহ কমে গিয়ে কেউ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

এর কিছুক্ষণ পর যখন রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয় এমনিতেই জ্ঞান ফিরে আসে কিন্তু মানুষ মনে করে ওঝার চিকিৎসা তেই বোধ হয় জ্ঞান ফিরে আসলো।

এটা একটা co-incidence।

সুতরাং সাপে কাটলে কোনভাবেই এক সেকেন্ড সময় দেরী না করে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে আসার ব্যাবস্থা করবেন।

এক্ষেত্রে খুব সাবধান থাকতে হবে, যে জায়গায় কামড় দিয়েছে যেমন পায়ে যদি কামড় দেয় তাহলে গাছের পট্টি কিংবা শক্ত লম্বা কোন লাঠি পায়ের সাথে বেধে দিন যাতে পা এর কোনরকম নড়াচড়া না হয়।

মনে রাখবেন নড়াচড়া যত কম হবে বিষ তত আস্তে ছড়াবে।৩-৪ টা বাঁধ দেয়ার দরকার নেই।

রশি দিয়ে শক্ত করে বাঁধার দরকার নেই, এতে রক্তচলাচল বন্ধ হয়ে আক্রান্ত অংশে পঁচন ধরতে পারে। এমনভাবে বাঁধুন যেনো এক বা দুটো আঙুল বাঁধনের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করানো যায়।

হাসপাতালে যাওয়ার পর, ডাক্তার এক সহজ পরীক্ষার মাধ্যমে বিষাক্ত সাপের কামড় নাকি বিষহীন সাপের কামড় বুঝতে পারবেন।

এটাকে Whole blood clotting test বলে। একটি টেস্টটিউব এ কিছু পরিমাণ রক্ত নিয়ে রেখে দিলে যদি তা স্বাভাবিক নিয়মে জমে যায় তবে, এটি বিষহীন সাপের কামড়। আর যদি না জমে যায় তবে, বিষাক্ত সাপের কামড়। এবং বিষটি হেমাটোটক্সিক। আর যদি নিউরোটক্সিক হয় তবে, Broken neck sign, Salivation, Ptosi, Verbal difficulty ইত্যাদি সাইন সিম্পটম পাওয়া যাবে…..

বিষাক্ত সাপের কামড় হলে…. Polyvenom snake antivenom ইনজেকশন দিয়ে চিকিৎসা করবেন। উল্লেখ্য যে, এই ইনজেকশন এর কারনে এলার্জিক রিয়েকশন হতে পারে….

Dr. Rezbaul Hasan Royal

Show Comments (0) Hide Comments (0)
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x
Verified by MonsterInsights