“””এই যে! চোখে দেখেন না?”””

রংপুর মেডিকেল মোড়,
বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম, দিনাজপুর যাবো!

একটা মেইল সার্ভিস (সিটিং বাস) আসল।

বেশি ভিড় নেই তবুও বাসে ওঠার জন্য একটা ন্যাচারেল তাড়া সবারই থাকে।

ঠিক যখন আমি উঠবো, হাই হিল পড়া এক মেয়ে ফোনে বাবু, শোনা, বাসে উঠবো বাই,বাই,টা,টা….করে দৌড়ে এসে ধাক্কা দিয়ে উঠে গেলো।

পিছনে হেল্পারের গায়ে না লগলে পড়েই যেতাম। সরি তো দুরের কথা সেই মেয়ে ঘুরে বলছে….

“””এই যে! চোখে দেখেন না?”””

আশেপাশে যারা ছিলেন ক্ষেপে গেলেন। আমি তাদের থামিয়ে দিলাম।

কিন্তু মেজাজটা এতোটাই গরম হয়েছিলো যে, প্রতিঙ্গা করে ফেললাম “””তুমি যে-ই হও, আজ তোমাকে সাইজ করবো!”””

বাসে উঠে দেখি, মহিলাদের জন্য বরাদ্দ ৯ টা সিটের মধ্যে খালি থাকলে সেই মেয়েটি মাঝের সিটে বসেছে। সামনে সিট খালি না থাকায়, বাধ্য হয়ে মেয়েটির পাশে বসে পড়লাম।

ইয়া মোটা সান গ্লাসের ভেতর দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি একটা শুকনো হাসি দিলাম।

দেখে মনে হয় না কোন অভদ্র ঘরের মেয়ে। হয়তো পরিবারের ছোট্ট মেয়ে না হয় কোন ধনীর একমাত্র দুলালী। সুন্দরীও বটে!

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু ছেকড়া তাকাচ্ছে বার বার। বাসের ছোট্ট সিটগুলোতে পায়ের ওপর পা দিয়ে অতি কষ্টে বসে আছে মেয়েটি। হঠাৎ মনে হলো, হতে পারে প্রাইভেট কার নষ্ট হয়েছে তাই জীবনের প্রথম বাসে উঠেছে!

বুঝতে পারছি না……
এসব ভাবতেছিলাম। সাডেনলি মেয়েঠি চশমা খুলে আমাকে জিজ্ঞেস করছে, “”আপনি কোথায় যাবেন???””

আমি অবাক হওয়ার ভান করে, চিল্লায়ে বললাম, কি ১০০০টাকা?

আশেপাশের সবাই চমকে উঠলো আর মেয়েটার দিকে তাকালো।

কে কি বুঝলো জানি না! হ্যাংলা একটা ছেলে পকেটে হাত দিলো। টাকা গুনছে মনে হয় ১০০০ হবে কিনা। আমি চুপচাপ বসে আছি।

মেয়েটি লজ্জায় লাল্ হয়ে গেলো! একটা ছাল ওঠানো পাকা কমলা, এই বুঝি ফেটে যাবে।

গায়ের চাদরটি মাথায় দিয়ে মাথা নীচু করে বসে রইলো।

ঠিক্ দশমিনিট পর, আমার গায়ে বমি করে দিলো! না ঠিক্ বমি নয়, বমি করার আগে উকি আসলে যে লালামিশ্রিত মিউকাস বের হয় সেটা। লাফ দিয়ে উঠে বাস স্টাফের কাছে পলিথিন নিয়ে দিলাম এবং পকেট থেকে টিশ্যু পেপার বের করে আমার শার্ট ও প্যান্টে লাগা মিউকাসগুলো মুছে ফেললাম।

আগের চেয়ে অনেক বেশি ঘৃণা জিনিসটা কমে গেছে আমার বুঝতে পারলাম। একদিন বড়ো ভাইয়ের সাথে সিসিইউ তে নাইটে ছিলাম। তিনটা সিরিয়াস রোগীর ২০ মিনিট পরপর বিপি নিতে হয়েছে সেদিন।

তারমধ্যে এক রোগী বাথরুম করেছিলো আর ঐ রোগীর আশেপাশে দুর্গন্ধ শুরু হয়েছিলো। ভাইয়া বিষয়টা জানতেন না, তাই আমাকে বিপি নিতে বলে একটা নতুন রোগী রিসিভ করছিলেন। আমি বিপি নিতে গিয়ে গড়গড় করে বমি করে দিলাম। রোগী ও সাথে তাদের লোকজন কাচুমাচু করে তাকালেন।

লজ্জায় আমার কান্না চলে এসেছিলো। ভাইয়া হেসে দিয়ে বলেছিলেন সব রোগী কিংবা রোগীনী তোমার বাবা-মা’য়ের মতো ভাববা।

যাইহোক্ মেয়েটিকে কিছু বললাম না বরং ব্যাগ থেকে পানি বের করে দিলাম। সে কুলি করে ফ্রেশ হলো। একটা হায়োসাইন হাইড্রো ব্রোমাইড (Joytrip) দিয়ে চুষে ক্ষেতে বললাম।

একটু হেসে বললাম কি ব্যাপার?

আপনি মা হতে চলেছেন নাকি?

মুখে হাত দিয়ে খিল্ খিল্ করে হেসে উঠলো!………

কিচ্ছুক্ষণ পর সে সুস্থ হলো এবং কানে চিমটি দিয়ে সরি বললো আর অনেকগুলো ধন্যবাদ দিলো…….

তারপর, পুরো দুই ঘন্টা জার্নি তে অনেক কথা হলো……

তারমধ্যে আমার প্রেডিকশনের সাথে কমন পড়েছে যেটা সেটা হলো……সে বাড়ির ছোট্ট এবং একমাত্র মেয়ে!

ওহ্ ভালো কথা, ওর বিয়ে আমাগী মাসে ঐ যে ফোনের শোনা বাবু টার সাথে , আমাকে স্পেশালি দাওয়াত দিয়েছে।

জিহ্বা দিয়ে ঠোঁটদুটো ভিজিয়ে বলেছিলাম “আসবো!”……..

Dr. Rezbaul Hasan

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x
Verified by MonsterInsights