Tag: ডেঙ্গু জ্বর

  • ডেঙ্গু নাকি চিকনগুনিয়া? কোনটি বেশি খারাপ? কি কি করনীয়?

    ডেঙ্গু নাকি চিকনগুনিয়া? কোনটি বেশি খারাপ? কি কি করনীয়?

    বর্তমানে হাইগ্রেড জ্বর সাথে শরীর ব্যাথা ও জয়েন্ট ব্যাথা হচ্ছে। আর শরীরে Rash দেখা দিচ্ছে।

    আচ্ছা একটা কি Dengue জ্বর নাকি Chikungunya?

    তার আগে জেনে নিই…..

    Dengue এবং Chikungunya দুটোই ভাইরাস দিয়ে হয়। আর এই ভাইরাসটির একমাত্র বাহক বা ভেক্টর হলো… এডিস মশা।

    এডিস মশা মূলত একটি অভিজাত শ্রেনীর মশা। এটি নতুন ও পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়তে পছন্দ করে। আজকাল প্রায়ই, বৃষ্টি হচ্ছে আবার কিছুদিন খরা হচ্ছে আবার বৃষ্টি হচ্ছে।

    এই রকম বৃষ্টির ধরণ খুবই খারাপ। কেননা এতে করে এডিস মশা বেশি বেশি বিস্তার লাভ করে। একটানা বৃষ্টি হলে এডিস মশা ডিম পাড়লেও সব ধুয়ে চলে যেতো, কিন্তু ব্রেক দিয়ে বৃষ্টির জন্য…

    এডিস মশা সুন্দর করে বেশি বেশি বংশের বাতি জ্বালিয়ে বিস্তার লাভ করছে আর Dengue এবং Chikungunya ছড়িয়ে দিচ্ছে।

    Chikungunya
    জ্বর, শরীর ব্যাথা, জয়েন্ট পেইন, বিশেষ করে Knee joint pain এবং জ্বর কমে গেলেই শরীরে Rash দেখা দিচ্ছে এটা Chikungunya র লক্ষণ।

    বর্তমানে ঢাকা শহরে Viral Fever বিশেষ করে Degue এবং Chikungunya মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে।

    কারণ, Dengue এবং Chikungunya একসাথে একি মশা থেকে ছাড়ায়।

    এর মানে হলো…..ঢাকাসহ যেসব জায়গায় Dengue র প্রবণতা আছে, সেখানে Chikungunya র ও প্রবনতা আছে।

    Dengue তে ১ম ১-৩ দিন High grade Fever থাকে। Fever এর সাথে Severe Headache( তীব্র মাথা ব্যাথা), Anorexia (খাবারের অরুচি), বমি থাকে।

    অপরদিকে, Chikungunya তেও High grade Fever থাকে, কিন্তু
    Dengue র মতো Severe Headache থাকে না।
    Dengue তে Vomiting থাকে। Chikungunya তে বেশি একটা Vomiting Tendency থাকে না।

    আবার, ডেঙ্গু জ্বর… এ
    ৪র্থ দিন CBC( Complete Blood Count) করলে platelet কমে যায়, তীব্র বমি বমি ভাব থাকে। জ্বর এর ৪র্থ দিন পর থেকে Blood pressure কমে যায়, শরীর দূর্বল হয়ে যায় (Generalised Weakness).

    তবে Knee joint ( হাটু) ব্যাথা তেমন থাকে না। Dengue তে প্ল্যাটিলেট কমে যায় কিন্তু চিকুনগুনিয়াতে platelet তেমন কমে না।

    আবার চিকুনগুনিয়াতে তীব্র জয়েন্ট ব্যাথা যথা হাঁটু (Knee joint pain) ব্যাথা, সব জয়েন্টে ব্যাথা থাকে, তেমন টা Dengue তে তেমন থাকে না।

    তবে কারো, কারো একই সাথে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া হতে পারে।

    Chikungunya সন্দেহ হলেও Dengue test করে নিতে হবে। কারণ, Chikungunya অপেক্ষা Dengue বেশি খারাপ।

    ডেঙ্গু exclude করার জন্য
    জ্বরের হিস্ট্রি খুব জরুরী। ৪র্থ দিন পর্যন্ত
    CBC
    Dengue Ns1Ag

    ৫ম দিন থেকে Dengue IgM, IgG পজিটিভ হতে শুরু করে।

    ডেঙ্গু exclude করে, নেগেটিভ আসলে, Chikungunya সন্দেহ হলে, চিকিৎসা শুধু Symptoms অনুযায়ী।

    যেমন, জ্বর ও ব্যাথার জন্য Tab. Napa one দিনে ৩ বার। Rash এ চুলকানী থাকলে, Tab. Fexomin 120mg (1+0+1) সাথে প্রচুর রসালো ফল-মূল, ডাবের পানি, কলা, ডিম, দুধ…প্রয়োজনে, ORS প্রতি প্যাকেট ১/২ লিটার পানিতে গুলিয়ে খেতে হবে। এছাড়া Immunity বুস্টিং করার জন্য Tab. Xinc-B/Bicozin, Multivitamins, Vitamin-D capsule ও নিতে পারেন।
    তীব্র জ্বর কমানোর জন্য নরমাল তাপমাত্রার ট্যাপের পানি দিয়ে গা মুছে ফ্যানের নিচে থাকলে শরীরের তাপ বাষ্পাকারে বের হয়ে যাবে।

    চিকুনগুনিয়া Confirm হওয়ার জন্য সব জায়গায় Investigation available নেই। তাই Dengue exclude করে Chikungunia ডায়াগনোসিস করা হয়।

    আর যদি টেস্ট করার সুযোগ থাকে, তাহলে জ্বরের প্রথম
    ৫ম দিনের মধ্যে

    RT-PCR for Chikungunya

    আর ৫ম দিন পর থেকে
    Chikungunya IgM, IgG টেস্ট করা হয়।

    উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বুঝতে পারলাম…..
    Chikungunya তে জ্বরের ৩-৫ দিনের মধ্যে Severe joint পেইন হবে(বিশেষ করে হাটু ব্যাথা) পরে Rash হবে।

    Chikungunya তে যেহেতু প্লেটলেট তেমন কমে না তাই….
    চিকনগুনিয়া তে ব্লিডিং হয় না। কমপ্লিকেশন কম। তবে, জয়েন্টে ব্যাথা টা খুবই Severe হতে পারে।

    বেড রেস্ট ও লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা নিলেই ৭-১০ দিনের মধ্যেই রোগী সুস্থ হয়ে যায়। তবে, ব্যাথা ৩-৪ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে।

    এরপর, জ্বর ভালো হয়ে গেলে post viral fatigue syndrome Develop করবে, শরীর অনেক দূর্বল লাগা থাকতে পারে।

    Dengue জ্বরের শুরুতেই চোখের পিছনে ব্যাথা দিয়ে(Retro-Orbital pain), অরুচি, বমি থাকে,
    সাথে ৫ম দিন থেকে রক্তে প্লেটলেট কমতে থাকে। প্রেসার কমতে থাকে। CBC প্রতিদিন করে রিপোর্ট অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হয়।

    তাই অবশ্যই MBBS ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, ডেঙ্গু রোগী যেকোন সময় খারাপ হতে পারে এমনকি মারাও যেতে পারে।

    ধন্যবাদ

    Dr. Rezbaul Hasan
    MBBS, MPH, MCGP, PGT(Medicine)

  • বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন..

    বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন..

    বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন।


    সর্দি-জ্বর, শরীর ম্যাজম্যাজ করা, অরুচি, কাশি, গায়ে ব্যাথা, মাথা ব্যাথা….বাচ্চা, যুবক, বৃদ্ধ সবাই আক্রান্ত হচ্ছেন। এমন কি একি পরিবারে সবাই আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রতিদিন প্রায় ২০-২৫ জন রোগী পাচ্ছি যাদের উপরের সমস্যা গুলো আছে। এমনকি নিজেও কিছুদিন ভুগেছি। জুলাই মাসে যার সর্দি-জ্বর, কাশি হয়নি তাকে একপ্রকার রোবট ই বলা চলে…….

    জুলাই আগষ্টে সারা বাংলাদেশে সর্দি জ্বর দেখা যায়, প্রথমে সর্দি, পরে জ্বর…শরীর ব্যাথা তারপর কাশি শুরু….

    এইসব জ্বরের মূল কারণ হচ্ছে ভাইরাস। যেমন Influenza virus, Respiratory synsytial virus ইত্যাদি দিয়ে infection. অর্থাৎ সর্দি যুক্ত জ্বর গুলি সব ভাইরাস জ্বনিত রোগ।

    এছাড়াও প্রায় প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে, আবার খরা দেখা দিচ্ছে। এতে করে ডেঙ্গু বিস্তার লাভ করছে। উল্লেখ্য যে, এডিস মশা নতুন পানিতে ডিম পাড়তে পছন্দ করে। এই এডিস মশা দিয়ে ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, জিকা ভাইরাসের মতো রোগ ছড়ায়…..

    জ্বর আসা মানেই হলো শরীরে জীবাণুর সংক্রমণ। যা ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়া দিয়ে হচ্ছে। এখন কোনটা ভাইরাল কোনটা ব্যাকটেরিয়াল জ্বর বুঝবো কিভাবে

    ভাইরাস জনিত জ্বর শুরু হয় সর্দি দিয়ে, সাথে শরীর ব্যাথা, অরুচি, স্বাদ ও গন্ধহীনতা থাকে এবং জ্বর অনেক বেশি হয়। ১০২-১০৪° ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে।

    অপর দিকে ব্যাকটেরিয়া জনিত জ্বরে সাধারণত সর্দি থাকেনা, ব্যাকটেরিয়া জনিত জ্বরের মধ্যে যেমন, টাইফয়েড, গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস, টিবি, প্রস্রাবের ইনফেকশন…. ইত্যাদি।

    ব্যাকটেরিয়া দিয়ে, জ্বর হলে চিকিৎসার জন্য Antibiotics প্রয়োজন হয়। ভাইরাস দিয়ে জ্বর হলে এন্টিবায়োটিক এর কোন কাজ নাই।

    যে জ্বর সর্দি দিয়ে শুরু হয়, কিংবা জ্বরের সাথে সর্দি থাকে, শরীর ব্যাথা থাকে তা ভাইরাস জ্বর।

    ভাইরাস জ্বর হলে বুঝে নিতে হবে, এইটা ভালো জ্বর। মানে কোন এন্টিবায়োটিক লাগবেনা, জ্বর ৪-৭ দিন থাকতে পারে। ভাইরাস জ্বরে এন্টিবায়োটিক দরকার নেই। এই জ্বর ১০১-২ ডিগ্রি দিয়ে শুরু হয়, এবং বাচ্চাদের ১০৪-৬ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে, ৩-৪ দিন এইভাবে জ্বর উঠানামা করে। এখানে ভয়ের কিছু নাই। এই জ্বর হাজার মেডিসিন দিলেও ৪-৭ দিন থাকবেই।

    এই জ্বর ৪-৭ দিনে ভালো হয়ে গেলে শুরু হয় কাশি, শুকনা কাশী, কাশিতে অনেক কষ্ট হয়, কারো ১৫ দিন, কারো ১ মাস, কারো ২ মাস ও থাকতে পারে।

    ভয়ের কিছু নেই।

    কেবল মনে রাখুন, যে জ্বরে সর্দি কিংবা নাকের পানি পড়ার হিস্ট্রি থাকে, সেই জ্বরে এন্টিবায়োটিক লাগেনা।

    বয়স্করা Tab. Napa one, ৮ ঘন্টা পরপর খাবেন।
    জ্বর ১০২ ডিগ্রির বেশি থাকে, তাহলে সাথে Napa 500 suppository দিবেন, যে বেলায় সাপোজিটরি দিবেন, ওই বেলায় Napa one Tablet বন্ধ থাকবে।

    এছাড়া, নরমাল তাপমাত্রায় ট্যাপের পানি দিয়ে গা মুছে দিয়ে ফ্যানের বাতাসে শুকাতে পারেন। এভাবে বাষ্পাকারে শরীরের তাপমাত্রা কমে যাবে।

    ****মনে রাখবেন, কখনোই ফ্রিজের ঠান্ডা পানি দিয়ে গা মুছে দিবেন না। এসি রুমেও শরীরের তাপমাত্রা কমে না।

    রুম টেম্পারেচা এ নরমাল পানি দিয়ে গা মুছে দিলে তা শরীরের তাপমাত্রা কমায়।

    জ্বরের সাথে প্রচন্ড নাক বন্ধ হয়ে থাকে, যাদের নাক বন্ধ হয়ে থাকে, তারা নাকে Antazol nasal drop দিবেন ১ ফোটা ২ নাকে দিন ২ বার ৫ দিন।

    আর যাদের নাক দিয়ে পানি পড়ে, তারা Fexofenadine 120 mg প্রতিদিন একটা করে খাবেন। নাকের পানি পড়া বন্ধ হওয়া পর্যন্ত।

    বাচ্চদের জন্য Norsol / Nosomist nasal drop ইউজ করবেন। Napa syrup প্রতি কেজিতে ১৫ মিলিগ্রাম করে হিসেব করে দিতে হবে।

    উল্লেখ্য যে, এক চামুচ নাপা সিরাপ এ 120mg থাকে। একচামুচ মানে ৫মিলিগ্রাম। অর্থাৎ ৫মিলি নাপা সিরাপ মানে ১২০মিলিগ্রাম নাপা সিরাপ।

    তাহলে বাচ্চার ওজন ১০ কেজি ওজনের বাবুর জন্য

    ১০×১৫= ১৫০মিলিগ্রাম নাপা সিরাপ পাবে দিনে তিনবার।

    ৫ মিলি তে থাকে ১২০মিলিগ্রাম তাহলে ১০ কেজি ওজনের বাচ্চা পাবে ৬মিলির একটু বেশি মিলি নাপা সিরাপ।

    ৫মিলিতে থাকে ১২০mg
    ১মিলিতে থাকে ২৪mg

    ৬মিলি তে থাকে ১৪৪mg

    বাচ্চা পাবে ১৫০mg

    তার মানে ৬মিলির একটু বেশি দিলেই হবে দিনে ৩ বার।

    আর নরমাল তাপমাত্রার পানি দিয়ে গা মুছে দিতে হবে। (Tapid sponging)

    কাশির জন্য….
    এই ধরণের সর্দিজ্বরের পর প্রচন্ড কাশি শুরু হয়, কাশির বাজারে অনেক সিরাপ পাওয়া যায়, তবে এই ধরণের শুকনো কাশিতে Bukof ভালো কাজ কর।
    সাথে Fexofenadine 120mg।

    সাথে পর্যাপ্ত বেড রেস্ট, রসালো ফলমূল, ORS, ডাবের পানি, কলা, চিড়া পানি ইত্যাদি প্রচুর খেতে হবে।

    আর যদি কোন পেশেন্টের ভাইরাস জ্বর পরবর্তী productive cough শুরু হয়, তাহলে হলে সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়ার infection suspect করা যেতে পারে, তখন prophylactic antibiotics প্রয়োজন হতে পারে। সাথে Smoking হিস্ট্রি, ডায়াবেটিস, প্রেসার, এ্যাজমা থাকলে অবশ্যই MBBS ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

    আবার গলা ব্যাথা হলেও সেকেন্ডারি ইনফেকশন সাসপেক্ট করা হয়। MBBS ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

    এই জ্বরে আরেকটা সমস্যা হচ্ছে জ্বর ভালো হবার পরে পুরো শরীর দূর্বল হয়ে যাওয়া, তাই জ্বর শুরু হবার পরে কিছু ভিটামিন সাপ্লিমেন্টারী শুরু করুন

    Cap.D-rise 40,000IU সপ্তাহে একটা করে৪ সপ্তাহ।
    Tab. Xinc- B ( দূর্বলতা কাটাবে, খাবারের রুচি বাড়াবে)
    1+0+1…..১৫দিন থেকে ১মাস।

    এসবের পাশাপাশি, ডেঙ্গু বা চিকনগুনিয়া এক্সক্লুড করার জন্য……

    জ্বর শুরু প্রথম ৩দিনের মধ্যে

    Dengue NS1Ag
    CBC

    টেস্ট অবশ্যই করে নেয়া উচিত।

    এবং রিস্ক ফ্যাক্টর যেমন…..ডায়াবেটিস, প্রেসার, এ্যাজমা, COPD, Stroke, Heart attack এর হিস্ট্রি সহ অন্যান্য রোগ থাকলে অবশ্যই MBBS ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত জরুরী।

    ……ধন্যবাদ

    Dr. Rezbaul Hasan
    MBBS(RU), MPH, MCGP(Medicine &Surgery)
    PGT (Medicine), DOC(Skin & VD)

  • ডেঙ্গু জ্বর…..

    ডেঙ্গু জ্বর…..

    আসসালামু আলাইকুম,

    আমরা সকলেই জানি ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ। গতবছর ডেঙ্গু মহামারী আকারে দেখা দিয়েছিলো। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রতিদিন হাসপাতালে মানুষ মারা যাচ্ছে।

    আজকের এই প্রতিবেদন টি, ডেঙ্গু প্রতিকারে করনীয় কি কি? ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ কি কি? কখন হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে? চিকিৎসা ও পরীক্ষা নীরিক্ষা সম্পর্কে আলোকপাত করছি……

    ডেঙ্গু ভাইরাস টি ছাড়ায় এডিস মশার কামড়ে। এডিস মশাটি মোটামুটি একটি অভিজাত প্রজাতির মশা, বড় বিল্ডিং দালান কোটাতে এদের বসবাস, এরা ফ্রেশ পানিতে ডিম পাড়ে আর বংশবৃদ্ধি করে। রাস্তায় ফেলে রাখা ডাবে খোসা, চিপস্ এর প্যাকেট, ফুলের টব ইত্যাদিতে বৃষ্টির ফলে পানি জমে থাকে সেই সব জায়গায় পরিষ্কার পানিতে এই মশা ডিম পাড়ে ও বংস বিস্তার করে।বর্তমানে বৃষ্টি হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন, এই সময়টি এডিস মশার বিস্তার লাভের উপযুক্ত সময়।

    মনে রাখতে হবে যে, এডিস মশা দিনের বেলা কামড়ায়, গভীর রাতে এই মশা কামড়ায় না। বিশেষ করে সন্ধ্যা বেলা ও ভোরের দিকে এই মশা বেশি কামড়ায়। হাত ও পা এ বেশি কামড়ায়।

    এমন কি একটি ডেঙ্গুবাহিত মশাও যদি কাউকে কেবল এক কামড় দেয়, তখনো মশার লালাতে অবস্থিত ডেঙ্গু ভাইরাস মশা থেকে মানুষের শরিরে চলে আসবে, এবং কামড় দেওয়ার ৩-১৪ দিনের মধ্যে জ্বর আসবে। বেশির ভাগ রোগীর, মশার কামড়ের ৫-৬ দিনের মধ্যে জ্বর দেখা যায়।

    ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ: প্রথম ৩-৪ দিন

    ১। জ্বরের সাথে সাথে সারা শরীর ব্যাথা করবে

    ২। চোখের পিছনে খুব ব্যাথা হবে

    ৩। পেটে ব্যাথা হবে

    ৪। শরীর চুলকাবে, Rash দেখা দিবে

    ৫। সর্দি কাশি তেমন একটা থাকেনা

    ৬। জয়েন্ট পেইন হবে, এবং মাংশপেশিতে ব্যাথা হবে

    ৭। পেটে ও বুকে পানি জমে যেতে পারে

    ৮। জ্বর হাই গ্রেড থাকবে

    এছাড়াও বমি বা বমি বমি ভাব থাকতে পারে, অরুচি থাকে।

    প্রথম ৩-৪ দিন পর ৮০-৯০% পেশেন্ট রিকভারি স্টেজে চলে যায়, ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকে। সুস্থ হবার আগে শরীরে Rash দেখা দিতে পারে।

    আর ১০-২০ % পেশেন্টে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার ডেভেলপ করতে পারে, জ্বর শুরু হওয়ার ৪-৫ দিন পর। তাই মনে রাখবেন, জ্বর কমে গেলে ডেঙ্গু রোগী আরো বেশি খারাপ হওয়ার ঝুঁকি থাকে….

    তখন নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো পাওয়া যাবে:

    ১। বমির সাথে রক্ত যাবে

    ২। ডায়েরিয়ার সাথে রক্ত যাবে

    ৩। নাক দিয়ে রক্ত বের হতে পারে

    ৪। দাতের মাড়ি থেকে রক্ত বের হবে

    ৫। মাসিকের রাস্তা দিয়ে রক্ত বের হতে পারে

    তখন সাথে সাথে পেশেন্ট কে হসপিটালে ভর্তি করাতে হবে। এই সময় রোগীর প্রেসার কমে যায়, হার্টবিট বেড়ে যায়, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। কিডনি বিকল হওয়াসহ রোগী শকে চলে যেতে পারে এবং তখন মৃত্যু ও হতে পারে।

    ডেঙ্গু কনর্ফাম হওয়ার জন্য, CBC করে Platelet count দেখা হয়। Platelet Count কমে যাবে, আর জ্বর শুর হবার প্রথম ৪ দিনের মধ্যে Dengue NS1 Antigen positive আসবে। প্রথম ৫ দিন পর…….

    Dengue IgM পজিটিভ =Active infection

    Dengue IgG পজিটিভ = রিকভারি (৮ম থেকে ৯ম দিনে পজিটিভ হয়) মানে রোগী ভালোর দিকে…..

    বর্তমানে ঢাকা ও এর আশে পাশের শহরে কেউ জ্বর, শরীর ব্যাথা, জয়েন্টে ব্যাথা, ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, নিয়ে আসলে ডেঙ্গু সন্দেহ করে নিচের পরীক্ষা গুলো করে নেয়া খুব জরুরি

    CBC

    Dengue NS1 antihigen (জ্বর শুরু হবার প্রথম ৪ দিনের মধ্যে আসলে)

    ৫ম দিনে আসলে

    CBC,

    NS1

    Dengue IgM

    ৫ দিন শেষ হবার পরে আসলে-

    CBC,

    Dengue IgM antibody

    এই গুলি ডেঙ্গু কনফার্ম করার জন্য।

    চিকিৎসা :

    জ্বর অনেক বেশি থাকে তাই paracetamol 500mg

    2+2+2 করে ভরা পেটে, বাচ্চাদের জন্য নয়।

    চুলকানি থাকলে Fexofenadin 120mg রাতে এক বেলা। সাথে প্রচুর পরিমানে তরল জাতীয় খাবার খাবেন। যেমন, ডাবের পানি, ORS(১/২লিটার পানিতে গুলিয়ে) রুম টেম্পারেচার ফ্যান ছেড়ে দিয়ে ভেজা কাপড় দিয়ে গা মুছে দিবেন। আর যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব MBBS ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।

    ছোট বাচ্চা, গর্ভবতী মা, হার্ট এর রোগী, কিডনির রোগী, ডায়বেটিস ও হাই প্রেসারের রোগী অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।

    Dr. Rezbaul Hasan Royal

Verified by MonsterInsights