আসসালামু আলাইকুম,
আমরা সকলেই জানি ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ। গতবছর ডেঙ্গু মহামারী আকারে দেখা দিয়েছিলো। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রতিদিন হাসপাতালে মানুষ মারা যাচ্ছে।
আজকের এই প্রতিবেদন টি, ডেঙ্গু প্রতিকারে করনীয় কি কি? ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ কি কি? কখন হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে? চিকিৎসা ও পরীক্ষা নীরিক্ষা সম্পর্কে আলোকপাত করছি……
ডেঙ্গু ভাইরাস টি ছাড়ায় এডিস মশার কামড়ে। এডিস মশাটি মোটামুটি একটি অভিজাত প্রজাতির মশা, বড় বিল্ডিং দালান কোটাতে এদের বসবাস, এরা ফ্রেশ পানিতে ডিম পাড়ে আর বংশবৃদ্ধি করে। রাস্তায় ফেলে রাখা ডাবে খোসা, চিপস্ এর প্যাকেট, ফুলের টব ইত্যাদিতে বৃষ্টির ফলে পানি জমে থাকে সেই সব জায়গায় পরিষ্কার পানিতে এই মশা ডিম পাড়ে ও বংস বিস্তার করে।বর্তমানে বৃষ্টি হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন, এই সময়টি এডিস মশার বিস্তার লাভের উপযুক্ত সময়।
মনে রাখতে হবে যে, এডিস মশা দিনের বেলা কামড়ায়, গভীর রাতে এই মশা কামড়ায় না। বিশেষ করে সন্ধ্যা বেলা ও ভোরের দিকে এই মশা বেশি কামড়ায়। হাত ও পা এ বেশি কামড়ায়।
এমন কি একটি ডেঙ্গুবাহিত মশাও যদি কাউকে কেবল এক কামড় দেয়, তখনো মশার লালাতে অবস্থিত ডেঙ্গু ভাইরাস মশা থেকে মানুষের শরিরে চলে আসবে, এবং কামড় দেওয়ার ৩-১৪ দিনের মধ্যে জ্বর আসবে। বেশির ভাগ রোগীর, মশার কামড়ের ৫-৬ দিনের মধ্যে জ্বর দেখা যায়।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ: প্রথম ৩-৪ দিন
১। জ্বরের সাথে সাথে সারা শরীর ব্যাথা করবে
২। চোখের পিছনে খুব ব্যাথা হবে
৩। পেটে ব্যাথা হবে
৪। শরীর চুলকাবে, Rash দেখা দিবে
৫। সর্দি কাশি তেমন একটা থাকেনা
৬। জয়েন্ট পেইন হবে, এবং মাংশপেশিতে ব্যাথা হবে
৭। পেটে ও বুকে পানি জমে যেতে পারে
৮। জ্বর হাই গ্রেড থাকবে
এছাড়াও বমি বা বমি বমি ভাব থাকতে পারে, অরুচি থাকে।
প্রথম ৩-৪ দিন পর ৮০-৯০% পেশেন্ট রিকভারি স্টেজে চলে যায়, ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকে। সুস্থ হবার আগে শরীরে Rash দেখা দিতে পারে।
আর ১০-২০ % পেশেন্টে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার ডেভেলপ করতে পারে, জ্বর শুরু হওয়ার ৪-৫ দিন পর। তাই মনে রাখবেন, জ্বর কমে গেলে ডেঙ্গু রোগী আরো বেশি খারাপ হওয়ার ঝুঁকি থাকে….
তখন নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো পাওয়া যাবে:
১। বমির সাথে রক্ত যাবে
২। ডায়েরিয়ার সাথে রক্ত যাবে
৩। নাক দিয়ে রক্ত বের হতে পারে
৪। দাতের মাড়ি থেকে রক্ত বের হবে
৫। মাসিকের রাস্তা দিয়ে রক্ত বের হতে পারে
তখন সাথে সাথে পেশেন্ট কে হসপিটালে ভর্তি করাতে হবে। এই সময় রোগীর প্রেসার কমে যায়, হার্টবিট বেড়ে যায়, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। কিডনি বিকল হওয়াসহ রোগী শকে চলে যেতে পারে এবং তখন মৃত্যু ও হতে পারে।
ডেঙ্গু কনর্ফাম হওয়ার জন্য, CBC করে Platelet count দেখা হয়। Platelet Count কমে যাবে, আর জ্বর শুর হবার প্রথম ৪ দিনের মধ্যে Dengue NS1 Antigen positive আসবে। প্রথম ৫ দিন পর…….
Dengue IgM পজিটিভ =Active infection
Dengue IgG পজিটিভ = রিকভারি (৮ম থেকে ৯ম দিনে পজিটিভ হয়) মানে রোগী ভালোর দিকে…..
বর্তমানে ঢাকা ও এর আশে পাশের শহরে কেউ জ্বর, শরীর ব্যাথা, জয়েন্টে ব্যাথা, ক্ষুধা মন্দা, বমি বমি ভাব, নিয়ে আসলে ডেঙ্গু সন্দেহ করে নিচের পরীক্ষা গুলো করে নেয়া খুব জরুরি
CBC
Dengue NS1 antihigen (জ্বর শুরু হবার প্রথম ৪ দিনের মধ্যে আসলে)
৫ম দিনে আসলে
CBC,
NS1
Dengue IgM
৫ দিন শেষ হবার পরে আসলে-
CBC,
Dengue IgM antibody
এই গুলি ডেঙ্গু কনফার্ম করার জন্য।
চিকিৎসা :
জ্বর অনেক বেশি থাকে তাই paracetamol 500mg
2+2+2 করে ভরা পেটে, বাচ্চাদের জন্য নয়।
চুলকানি থাকলে Fexofenadin 120mg রাতে এক বেলা। সাথে প্রচুর পরিমানে তরল জাতীয় খাবার খাবেন। যেমন, ডাবের পানি, ORS(১/২লিটার পানিতে গুলিয়ে) রুম টেম্পারেচার ফ্যান ছেড়ে দিয়ে ভেজা কাপড় দিয়ে গা মুছে দিবেন। আর যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব MBBS ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
ছোট বাচ্চা, গর্ভবতী মা, হার্ট এর রোগী, কিডনির রোগী, ডায়বেটিস ও হাই প্রেসারের রোগী অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
Dr. Rezbaul Hasan Royal

Leave a Reply