জলাতঙ্ক মস্তিষ্কের এমন একটি গুরুতর অসুখ, যেখানে মৃত্যুর হার অনেক বেশি……
পৃথিবীতে খুব কম রোগ ই আছে,
যা হলে মৃত্যু অনিবার্য তথা ১০০% মৃত্যু
র্যাবিস হলো তারমধ্য অন্যতম,
অর্থাৎ র্যবিস হলে রক্ষা নেই, ১০০% মৃত্যু নিশ্চিত…..
জলাতঙ্ক (Rabies) এর টিকা সম্পর্কে
জলাতঙ্ক রোগ হয় Rabies virus আক্রান্ত কিছু প্রাণীর কামড় বা আক্রমণে।
যেসব প্রাণী থেকে জলাতঙ্ক জীবাণু ছড়ায়:
গৃহপালিত: কুকুর (সবচেয়ে বেশি), বিড়াল
গৃহ-পরিবেষ্টিত: গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া (হতে পারে রেয়ার কেস)
জলাতঙ্কের উপসর্গের মধ্যে রয়েছে-
কর্কশ কণ্ঠস্বর
খিটখিটে মেজাজ
অন্যকে অকারণে কামড় বা আক্রমণের প্রবণতা
খাবারে অরুচি
অস্বাভাবিক কথাবার্তা
উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ানো
পানি পিপাসা পেলেও পানি দেখে আতঙ্কিত হওয়া
আলো বাতাসের সংস্পর্শে এলে ভয় বেড়ে যাওয়া
মানুষের চোখের আড়ালে, অন্ধকারে, একা থাকতে পছন্দ করেন।
খিঁচুনি ও মুখে লালা বের হওয়া ইত্যাদি।শেয়াল, বানর, নেকড়ে, বাদুড়, ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, বেজি, চিকা, বনবিড়াল ( রেয়ার কেস)
সুপ্তি কাল:
৫ দিন থেকে কয়েক বছর (সাধারণত ২-৩ মাস, ১বছরের উপর খুউব কম ক্ষেত্রেই)।
প্রি- এক্সপোজার (প্রাণী দ্বারা আক্রমণ না হলেও): Anti-Rabies Vaccine (ARV)
জলাতঙ্কের জন্য দুই ধরনের টিকা রয়েছে। একধরনের টিকা মাংসপেশিতে (শুধু বাহুতে) এবং অন্যটি চামড়ায় দিতে হয়।
১) ইন্ট্রাডারমাল (চামড়ায়): ০.১মিলি/ডোজ ২টি স্থানে দিতে হবে ০, ৭ দিন।
২) ইন্ট্রামাসকুলার (মাংসপেশীতে): ১টি ভায়াল (১মিলি ও ০.৫ মিলি হিসাবে পাওয়া যায়) দিতে হবে ০, ৭ দিন।
পোস্ট এক্সপোজার (প্রাণী দ্বারা আক্রমণ হওয়ার পর):
জীবাণুর সংস্পর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা:
ক্যাটাগরি ১: পশু যদি শুধু স্পর্শ করে বা অক্ষত চামড়া স্পর্শ (licking) করে।
চিকিৎসা: কিছুই করতে হবে না। ত্বক সাবান পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
ক্যাটাগরি ২: আঁচড়, ছুলে গেছে কিন্তু রক্ত বের হয় নি।
চিকিৎসা: স্কিন বা চমড়ার যত্ন নেওয়া এবং টিকা নিতে হবে।
ক্যাটাগরি ৩:
-চামড়া ভেদ করা কামড়,
-ছুলে যাওয়া চামড়া কিংবা দেহাভ্যন্তরে লেহন,
-মুখমণ্ডল বা পিঠে মেরুদণ্ডের কাছাকাছি আঁচড়,
-মারাত্মক কামড়ে আহত
-রক্তখেকো বাদুড়ের আঁচড় দিলে
চিকিৎসা:
- চামড়ার যত্ন, ক্ষতের চিকিৎসা,
*টিকা ও
- ইমিউনোগ্লোবিন ইনজেকশন নেওয়া
- Anti Tetanus প্রয়োজন হলে
*Antibiotics প্রয়োজন হলে।
চামড়ার যত্নে করণীয়-
- তীব্র পানির ঝাঁপটায় ধুয়ে ফেলুন।
- সাবান, জীবাণুনাশক ব্যবহার করুন।
- গভীর ক্ষত হয়ে গেলে আক্রান্ত স্থানে ক্যাটাগরি ৩-এর ব্যবস্থা নিতে হবে।
চামড়ার যত্নে বর্জনীয়:-
ক) হাত দিয়ে সরাসরি স্পর্শ করবেন না।
খ) মাটি, কয়লা, তেল, চক লাগাবেন না।
গ) সেলাই, বৈদ্যুতিক কটারি (পুড়িয়ে দেওয়া) করবেন না।
ঘ) টিকা ও ইমিউনোগ্লোবিন একই সিরিঞ্জে দেওয়া যাবে না। ইমিউনোগ্লোবিন দেওয়ার আগে ত্বক পরীক্ষা (স্কিন টেস্ট) করে নেওয়া উচিত।
টিকা এবং ডোজ:
আগে কিংবা গত পাঁচ বছরে টিকা দেওয়া হয়নি, এমন ব্যক্তি বা শিশুর জন্য ডোজ:
০, ৩, ৭, ১৪ ও ২৮ তম দিন। (মোট ৫টি)
ইন্ট্রাডারমাল টিকার জন্য:
দুই বাহুতে ২টি টিকা এবং ০, ৩ ও ৭ম দিনে।
- পশু আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে অন্তত ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই টিকা নিয়ে নেওয়া উচিত।
- শুধু গৃহপালিত কুকুর ও বিড়ালের কামড়ের পর যদি সেই প্রাণী পরবর্তী ১০ দিন সম্পূর্ণ সুস্থ থাকে, তবে ১৪ ও ২৮তম দিনের টিকা না দিলেও হবে।
জলাতঙ্ক মস্তিষ্কের এমন একটি গুরুতর অসুখ, যেখানে মৃত্যুর হার অনেক বেশি।
কোনো রকম সন্দেহ থাকলেও ভয়াবহতা বিবেচনা করে টিকা নিয়ে নেওয়াই উত্তম
Dr. Rezbaul Hasan royal